Reset Password

Your search results
September 30, 2025

সাপ্তাহিক ছুটিতে ঢাকার আশেপাশের এক দিনে ঘুরে আসার ১০টি ট্যুরিস্ট স্পট

সপ্তাহজুড়ে কাজের ব্যস্ততা, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অব্দি অফিস-বাসা-যানজটের একই রুটিন।  শুক্রবারটা এলেই মনে হয় “আহা, যদি একটু দূরে কোথাও যাওয়া যেত!”

ভাবুন তো সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে সকালে বেরিয়ে গেলেন গাড়ি বা মাইক্রোতে, কিছুক্ষণের মধ্যেই শহরের কোলাহল পেছনে ফেলে চারপাশে সবুজ মাঠ, সারি সারি গাছ আর খোলা  আকাশের নিচে চলে আসলেন। ব্যস্ত শহরের ভিড়, হর্ন, ধোঁয়া সব যেন মুহূর্তেই মিলিয়ে গেলো। দুপুরে বসে পড়লেন লেকের ধারে কিংবা কোনো ঐতিহাসিক স্থাপনার ভেতরে, হাতে গরম চা আর চারপাশে নিরিবিলি পরিবেশ তো আছেই।

দেখবেন দিনটা কেটে যাবে হেসে-খেলে, ঘুরে-ফিরে আর ছবি তুলে। ঢাকার আশেপাশে এমন অনেক স্পট আছে, যেখানে সকালে বেরিয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই ঘুরে আসতে পারবেন। সব মিলে দারুন একটি দিন কাটবে। 

পুরো সাপ্তাহের কাজের শেষে ব্যস্ত নগরী থেকে ছুটি নিয়ে ঘুরে আসুন ঢাকার আশে পাশে অবস্থিত ট্যুরিস্ট স্পট থেকে।  

তাই যারা ব্যস্ততার মাঝেও একটু রিফ্রেশমেন্ট খুঁজছেন, তাদের জন্য এই ছোট্ট ভ্রমণ হতে পারে একেবারে পারফেক্ট অপশন।  আজকে আমরা দেখে নিবো এমন ১০ টি স্থান। 

শালবন বৌদ্ধ বিহার ও ময়নামতি ভ্রমণ

Shalban Vihara and Mainamati

কখনও কি ভেবেছেন, ঢাকার কাছেই এমন এক জায়গা আছে যেখানে দাঁড়ালেই মনে হবে আপনি কয়েকশ বছর পেছনে চলে গেছেন?
হ্যাঁ, বলছি কুমিল্লার শালবন বৌদ্ধ বিহার ও ময়নামতি প্রত্ননগরীর কথা। শালবন বৌদ্ধ বিহার আসলে ৮ম শতকের এক বিশাল বৌদ্ধবিহারের ধ্বংসাবশেষ। চারদিক ঘিরে লম্বা করিডর, মাঝখানে মন্দির আর ভেতরে অসংখ্য কক্ষ নিয়ে নির্মিত এই বিহার। এখানে ঘুরতে গেলে আপনি সহজেই কল্পনা করতে পারবেন সেই সময়ের বুদ্ধ ভিক্ষুদের জীবনযাত্রা। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, ময়নামতি এলাকায় এরকম অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা ছড়িয়ে আছে যা একসাথে একটা প্রত্ননগরী গড়ে তুলেছে। 

কীভাবে যাবেন ? 

ঢাকা থেকে ময়নামতি যেতে সময় লাগে ২.৫–৩ ঘণ্টা।

  • বাসে গেলে: সায়দাবাদ, কমলাপুর বা ফকিরাপুল থেকে কুমিল্লাগামী বাসে উঠুন। ভাড়া ৩০০ – ৭০০ টাকার মধ্যে। কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট নামলেই শালবন বৌদ্ধ বিহার কাছেই, সিএনজি বা রিকশায় ১০ – ১৫ মিনিট।
  • ট্রেনে গেলে: কমলাপুর থেকে চট্টগ্রাম বা নোয়াখালীগামী যেকোনো ট্রেনে উঠতে পারেন। কুমিল্লা স্টেশন থেকে অটোরিকশায় ২০- ২৫ মিনিটেই পৌঁছে যাবেন।
  • নিজের গাড়িতে গেলে: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে সরাসরি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত গেলে রাস্তাই আপনাকে গাইড করবে, এছাড়া গুগুল ম্যাপ তো আছেই।

ভ্রমণ টিপস

  • সকালে বের হলে দিনে সব ঘুরে সন্ধ্যার মধ্যে ঢাকা ফেরা যায়।
  • গরমে গেলে অবশ্যই পানির বোতল, টুপি আর সানগ্লাস রাখবেন।
  • শালবন বিহারের পাশে ময়নামতি প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর আছে – সময় থাকলে অবশ্যই দেখে নেবেন।
  • কুমিল্লার রসমালাই টেস্ট করতে ভুলবেন না 
  • আরামদায়ক জুতো পরুন, কারণ হাঁটাহাটি বেশ হয়।
  • মনে রাখবেন, জায়গাটা সেনানিবাস এলাকায়, তাই ছবি তোলার সময় নিয়মকানুন মেনে চলা জরুরি।

লোকেশনঃ  ম্যাপ

পানাম সিটি ও বাংলাদেশ লোকশিল্প জাদুঘর ভ্রমণ

Panam city Sonargaon Museum

ঢাকার খুব কাছেই যদি ইতিহাস আর সংস্কৃতির ভিন্ন স্বাদ পেতে চান, তবে নারায়ণগঞ্জের পানাম সিটি আর সোনারগাঁয়ের বাংলাদেশ লোকশিল্প জাদুঘর হতে পারে সেরা গন্তব্য। পাশাপাশি অবস্থান হওয়ায় দুটো জায়গাই একসাথে ঘুরে দেখা যায় একদিনে। তাই পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে একদিনের ট্যুরের জন্য একেবারে পারফেক্ট অপশন এই জায়গাটি।

পানাম সিটি একসময় বাংলার অন্যতম ধনী শহর ছিল। ১৫শ শতকে ইশা খান এই শহর গড়ে তোলেন, পরে মুঘল আর ব্রিটিশ আমলেও এটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র হয়ে ওঠে। আজও এখানে দাঁড়িয়ে থাকা পুরনো দালানগুলো সেই গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষী। 

পানাম সিটি থেকে খুব কাছেই সোনারগাঁয়ের লোকশিল্প জাদুঘর। এখানে গেলে আপনি বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি, শিল্পকলা আর ঐতিহ্যের এক বিশাল ভাণ্ডার দেখতে পাবেন।

কীভাবে যাবেন ? 

  • বাসে গেলে: গুলিস্তান থেকে সোনারগাঁগামী লোকাল বা এসি বাসে উঠতে পারেন। ভাড়া ৫০ – ১০০ টাকা। সোনারগাঁ নামলেই রিকশা বা অটোরিকশায় সহজে লোকশিল্প জাদুঘর ও পানাম সিটি যাওয়া যায়।
  • নিজের গাড়িতে গেলে: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা থেকে ভেতরে ঢুকলেই সোনারগাঁ। ১ থেকে ১.৫ ঘণ্টায় খুব সহজেই পৌঁছে যাবেন।

ভ্রমণ টিপস 

  • দুপুরের আগেই বের হলে দিনে দুটো জায়গাই ভালোভাবে ঘোরা যায়।
  • গরমকালে অবশ্যই পানির বোতল, ছাতা ও হালকা পোশাক রাখবেন।
  • লোকশিল্প জাদুঘরের টিকিট ও পানাম সিটির প্রবেশ টিকিট আলাদা – কিছুটা নগদ টাকা রাখাই ভালো।
  • জায়গাগুলোতে ঘোরার সময় পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন, কোথাও আবর্জনা ফেলবেন না।চাইলে লোকশিল্প জাদুঘরের ভেতরের রেস্তোরাঁয় খাওয়া সেরে নিতে পারেন, তবে নিজের স্ন্যাকস বা পানীয় সঙ্গে রাখলে সুবিধা হবে।

লোকেশনঃ  ম্যাপ

নুহাশ পল্লী

Nuhash polli

গাজীপুরের পিরুজালী গ্রামের ঘন শালবনের ভেতর দিয়ে যে পথ গেছে, সেটিই নিয়ে যায় নুহাশপল্লীতে। কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের স্বপ্নের ঠিকানা এটি। এখানে তিনি লিখেছেন তার বিখ্যাত সব গল্প – উপন্যাস, নির্মাণ করেছেন দর্শকনন্দিত সব নাটক-সিনেমা আর প্রকৃতির সান্নিধ্যে থেকেছেন জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত।

১৯৮৭ সালে ২২ বিঘা জমিতে গড়ে ওঠা নুহাশপল্লী এখন প্রায় ৪০ বিঘা। পুত্র নুহাশের নামে নামকরণ করা এ জায়গায় আছে লীলাবতি পুকুর, ভুতবিলাস, বৃষ্টি বিলাস, ট্রি হাউজসহ নানা ভাস্কর্য। প্রায় ৩০০ প্রজাতির ফল ও ঔষধি গাছের সমাহারও রয়েছে এখানে।

নুহাশ পল্লীতে কী দেখবেন ?

  • বিস্তৃত সবুজ মাঠ, বাগান এবং ঘন গাছপালা, যেখানে প্রকৃতির সৌন্দর্য অনুভব করা যায়।
  • বিভিন্ন ভাস্কর্য ও স্থাপনা, হুমায়ূন আহমেদের ব্যক্তিগত সংগ্রহ।
  • হুমায়ূন আহমেদের প্রিয় স্থানগুলো যেমন লীলাবতি পুকুর, ভুতবিলাস, বৃষ্টি বিলাস, ট্রি হাউজসহ নানা ভাস্কর্য।

কীভাবে যাবেন ?

  • নিজস্ব গাড়িতে: ঢাকা থেকে টঙ্গী হয়ে গাজীপুর যাওয়ার পথে পুবাইল। গুগল ম্যাপ ব্যবহার করলে সহজেই নুহাশ পল্লী পৌঁছাতে পারবেন। সময় লাগবে প্রায় ১.৫–২ ঘণ্টা।
  • পাবলিক ট্রান্সপোর্টে: ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে গাজীপুরগামী বাসে উঠুন। গাজীপুর পৌঁছে অটোরিকশা বা সিএনজি নিয়ে নুহাশ পল্লীতে যেতে পারবেন।

ভ্রমণ টিপস

  • নুহাশ পল্লী ঘোরার জন্য সকালে বের হলে ভালো, দুপুরের রোদ এড়িয়ে আরাম করে সময় কাটানো যায়।
  • প্রবেশ টিকিট রয়েছে, সাথে কিছু নগদ টাকা রাখা ভালো।
  • জায়গাটা বেশ বড়, তাই আরামদায়ক পোশাক ও হাঁটার উপযোগী জুতো পড়ুন।
  • খাবারের জন্য কাছাকাছি রেস্টুরেন্ট আছে, তবে চাইলে স্ন্যাকস বা পানি সঙ্গে রাখতে পারেন।

লোকেশনঃ – ম্যাপ

গাজীপুর সাফারি পার্ক

gazipur eco park

গাজীপুর সাফারি পার্ক, যা গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নে অবস্থিত। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তরে, বাঘের বাজার থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে গেলে পার্কের প্রবেশ গেইট দেখা যায়।

প্রায় ৩,৬৯০ একর বিস্তৃত এই সাফারি পার্কে ছোট টিলা, ঘন শালবন এবং বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী রয়েছে। পার্কটি থাইল্যান্ডের সাফারি ওয়ার্ল্ডের আদলে তৈরি করা হয় এবং ২০১৩ সালে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এখানে প্রধান আকর্ষণ কোর সাফারি, যেখানে মিনিবাসে ঘুরে উন্মুক্তভাবে থাকা বাঘ, সিংহ, জিরাফ, জেব্রা, হরিণসহ অন্যান্য প্রাণী দেখা যায়।

পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে একদিনের ঘুরে বেড়ানোর জন্য এটি একটি আদর্শ গন্তব্য।

কী দেখবেন ? 

  • সাফারি রাইড: বিশেষ সাফারি বাসে উঠে ঘুরতে পারবেন সিংহ, বাঘ, ভালুক, জেব্রা, হরিণ, জিরাফসহ অসংখ্য প্রাণীর রাজ্যে। খাঁচায় নয়, বরং খোলা প্রাকৃতিক পরিবেশেই প্রাণীগুলো ঘোরাফেরা করে।
  • প্রাণী জোন: আলাদা আলাদা অংশে বিভক্ত—সিংহ সাফারি, বাঘ সাফারি, হাতি সাফারি, জেব্রা-জিরাফ এলাকা ইত্যাদি।
  • এভিয়ারি বা পাখির জগৎ: রঙিন ও বিরল প্রজাতির অনেক পাখি এখানে দেখতে পাবেন।
  • লেক ও সবুজ বনাঞ্চল: শুধু প্রাণী নয়, বিশাল বন আর লেকের সৌন্দর্যও মন ভরিয়ে দেবে।

কীভাবে যাবেন ?

  • নিজস্ব গাড়িতে: ঢাকা থেকে জয়দেবপুর হয়ে মাওনা চৌরাস্তা, সেখান থেকে শ্রীপুরের মুলগাছা রোড ধরে সহজেই সাফারি পার্কে পৌঁছানো যায়। সময় লাগবে প্রায় ২–২.৫ ঘণ্টা।
  • পাবলিক ট্রান্সপোর্টে: গাজীপুর বা মাওনা চৌরাস্তা পর্যন্ত বাসে আসা, এরপর অটোরিকশা বা সিএনজিতে পার্কে যাওয়া। ঢাকার মহাখালী থেকে শ্রীপুর, ভালুকা বা ময়মনসিংহগামী বাসে গাজীপুর চৌরাস্তা অতিক্রম করলে বাঘের বাজারে সাফারি পার্কের সাইনবোর্ড দেখা যাবে। বাঘের বাজার থেকে সাফারি পার্কে রিকশা বা অটোরিকশার ভাড়া ২০–৪০ টাকা। 

ভ্রমণ টিপস

  • প্রবেশ টিকিট এবং সাফারি রাইডের টিকিট আলাদা।
  • সকালবেলা বের হওয়া ভালো, ভিড় এড়িয়ে আরাম করে ঘুরা যায়।
  • বাচ্চাদের সঙ্গে গেলে নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখুন।
  • পার্কের ভেতরে খাবারের ব্যবস্থা আছে, তবে হালকা স্ন্যাকস ও পানি সঙ্গে নিতে পারেন। বাইরে থেকে খাবার আনা যাবে না
  • পানীয়ের বোতল, পলিথিন বা অন্য আবর্জনা নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলুন।
  • বাঘ ও সিংহ দেখার সময় চলন্ত গাড়ি থেকে নামবেন না।
  • হিংস্র বন্য প্রাণীর খাঁচার কাছে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
  • বন্যপ্রাণিদের খাবার দেবেন না।
  • সতর্কতা বার্তা এবং নির্দেশাবলী মেনে চলুন।
  • মাইক বা উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী যন্ত্র ব্যবহার করবেন না।
  • বিশ্রামাগার ব্যবহার করতে চাইলে আগে বুকিং দিয়ে নিন।

লোকেশনঃ – ম্যাপ

মাওয়া ঘাট

Mawa Ghat – Padma River, Munshiganj

“মাছে ভাতে বাঙালি”- এই প্রবাদ বহু পুরোনো। তবে মাছের রাজা ইলিশ হলে এর আনন্দই আলাদা। আর সেই ইলিশ যদি হয় পদ্মা নদীর তাজা মাছ, সরিষার তেলে ঝাঁঝালো করে ভাজা, তাহলে আর কিছু চাওয়ার থাকে না।

ঢাকা থেকে মাত্র দেড় থেকে দুই ঘণ্টার পথেই পৌঁছে যাবেন মুন্সিগঞ্জের মাওয়া পর্যটন কেন্দ্রে। পদ্মা সেতুর ঠিক পাশেই গড়ে উঠেছে এই জনপ্রিয় স্পট। পদ্মার তীরে বসে ইলিশের স্বাদ নিতে নিতে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা এখন ঢাকার মানুষের ভ্রমণের সেরা গন্তব্য হয়ে উঠেছে। 

কী দেখবেন ?

  • পদ্মা নদীর সৌন্দর্য: ভোরে বা বিকেলে পদ্মার বিশাল জলরাশি উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া সূর্যাস্তের সময় পদ্মার চারপাশের পরিবেশ আপনার মন ভালো করে দিবে।
  • নৌভ্রমণ: চাইলে স্পিডবোট বা নৌভ্রমণ করতে পারেন।
  • ইলিশের স্বাদ: মাওয়ার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ পদ্মার ইলিশ। ঘাটের আশেপাশে অনেক রেস্টুরেন্টে ভাল ইলিশ পেয়ে যাবেন। 

কীভাবে যাবেন ?

  • ঢাকা থেকে মাওয়া ঘাটে যেতে পারেন নিজস্ব গাড়ি, মাইক্রোবাস বা বাইকে। ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের কারণে রাস্তা এখন অনেক সহজ আর আরামদায়ক।
  • পাবলিক ট্রান্সপোর্টেও যেতে পারবেন। গাবতলী, গুলিস্তান বা সায়েদাবাদ থেকে সরাসরি মাওয়া ঘাটগামী বাস চলে।

ভ্রমণ টিপস

  • সূর্যাস্তের সময়টায় গেলে সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।
  • পদ্মার ইলিশ খেতে চাইলে সিজনের (জুন – সেপ্টেম্বর) সময়টা বেস্ট।
  • নৌকা বা স্পিডবোটে উঠলে অবশ্যই লাইফজ্যাকেট ব্যবহার করবেন।
  • সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ভিড় বেশি হয়, তাই একটু আগে বের হলে ভালো।

লোকেশনঃ – ম্যাপ

মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি

Murapara Zamindar Bari

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অবস্থিত মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি বাংলার জমিদারি ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন। ১৮৮৯ সালে জমিদার বাবু রামরতন ব্যানার্জী এটি নির্মাণ করেন। প্রায় ৬২ বিঘা জমির ওপর গড়া এই প্রাসাদে আছে কারুকার্যমণ্ডিত ৯৫টি কক্ষ।

১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর জমিদার পরিবার কলকাতা চলে গেলে বাড়িটি কিছুদিন পরিত্যক্ত থাকে। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। বর্তমানে ভবনটি সরকারি মুড়াপাড়া কলেজ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ঢাকা থেকে অল্প সময়েই পৌঁছানো যায় বলে মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি একটি চমৎকার একদিনের ভ্রমণস্থান।

কী দেখবেন ? 

  • বিশাল আঙিনা ঘেরা ইউরোপীয় ধাঁচের স্থাপত্য ও নকশা।
  • খিলান, দালান আর বারান্দায় পুরনো দিনের কারুকাজ দেখতে পাবেন।

কীভাবে যাবেন?

  • ঢাকা থেকে প্রায় ২৫–৩০ কিলোমিটার দূরে।
  • গুলিস্তান বা সায়েদাবাদ থেকে রূপগঞ্জগামী বাসে উঠতে পারেন, নামতে হবে ভূলতা বা মুড়াপাড়া এলাকায়। সেখান থেকে রিকশা/অটোতে সহজেই পৌঁছে যাবেন জমিদার বাড়িতে।
  • নিজস্ব গাড়ি বা বাইক থাকলে ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে ধরে গেলে খুব কম সময়েই পৌঁছানো যায়।

ভ্রমণ টিপস

  • সপ্তাহের মাঝের দিন গেলে ভিড় কম পাবেন।
  • ক্যামেরা অবশ্যই নেবেন, কারণ ছবির জন্য জায়গাটা দারুণ।

লোকেশনঃ – ম্যাপ

মহেড়া জমিদার বাড়ি

Mohera Zamindar Bari

টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুরে অবস্থিত মহেড়া জমিদার বাড়ি আমাদের দেশের সবচেয়ে সুন্দরভাবে সংরক্ষিত জমিদার বাড়িগুলোর একটি। প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এই জমিদার বাড়ি একসময় ছিল জমিদারদের জৌলুশের প্রতীক।

প্রায় আট একর জমিতে গড়ে ওঠা এই জমিদারি বাড়ির প্রধান ভবনগুলো হলো চৌধুরী লজ, মহারাজ লজ, আনন্দ লজ ও কালীচরণ লজ। পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে একদিনের ঘুরে আসার জন্য মহেরা জমিদার বাড়ি একটি চমৎকার ডেস্টিনেশন।

কী দেখবেন ? 

  • চৌধুরী লজ
  • মহারাজ লজ
  • নীল-সাদা তিনতলা ভবন, ঝুলন্ত বারান্দা, সামনে পশুপাখির ভাস্কর্যময় আনন্দ লজ এবং বাগান।
  • ইংরেজ স্থাপত্যে নির্মিত, ‘ইউ’ আকারের কালীচরণ লজ 
  • নায়েব ভবন, কাচারি ভবন, রানী মহল।
  • বিশাল দীঘি, পুকুর, সবুজ বাগান, ছোট পার্ক এবং বোট রাইডের সুবিধা।

কীভাবে যাবেন ? 

  • ঢাকা থেকে দূরত্ব প্রায় ৭৫ কিলোমিটার।
  • গাবতলী বা মহাখালী থেকে মির্জাপুরগামী বাসে উঠতে পারেন। নামতে হবে মির্জাপুরে, সেখান থেকে অটোরিকশা বা সিএনজিতে সহজেই পৌঁছে যাবেন মহেড়া জমিদার বাড়িতে।
  • প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাসে গেলে ঢাকার বাইরে বেরিয়ে মাত্র ২- ২.৫ ঘণ্টায় পৌঁছানো সম্ভব।

ভ্রমণ টিপস

  • এখানে প্রবেশের জন্য টিকিট লাগে, তাই টিকিট কাউন্টার থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
  • সকাল সকাল গেলে ভিড় কম পাবেন এবং ফটোশুটের জন্য ভালো আলো পাওয়া যাবে।
  • ক্যামেরা নিতে ভুলবেন না।
  • আশেপাশে খাবারের দোকান কম, তাই চাইলে সঙ্গে খাবার নিয়ে যেতে পারেন বা মির্জাপুর শহরে খেতে পারেন।

লোকেশনঃ – ম্যাপ

রিসোর্টে একদিন

gazipur resort

দূরত্ব বা সময়ের কারণে অনেকেই ব্যস্ত শহর ছেড়ে প্রকৃতির মাঝে সময় কাটাতে পারেন না। তবে শুধু একদিন বের করলেই সেই অভিজ্ঞতা অনেকাংশে পূরণ করা সম্ভব। এসব রিসোর্টে সকালে গিয়ে সন্ধ্যায় ফিরে আসা যায়, এবং সারাদিনের জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ ও সুবিধা পাওয়া যায়।

এইসব প্যাকেজের ভিতর সারাদিনের খাওয়া দাওয়া থেকে শুরু করে পিক এন্ড ড্রপ সার্ভিস ও আছে। সারাদিন আপনি চাইলে রিসোর্টের বিভিন্ন এক্টিভিটি করে পরিবার বা বন্ধুবাওন্ধব নিয়ে সময় পার করতে পারেন। ঢাকার আশে পাশে এমন কিছু  রিসোর্ট হলো

  • সারাহ রিসোর্ট (লোকেশনঃ – ম্যাপ)
  • ভাওয়াল রিসোর্ট (লোকেশনঃ – ম্যাপ)
  • ছুটি রিসোর্ট (লোকেশনঃ – ম্যাপ)
  • নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট (লোকেশনঃ – ম্যাপ)
  • রাজেন্দ্র ইকো রিসোর্ট (লোকেশনঃ – ম্যাপ)
  • রাঙামাটি ওয়াটার ফ্রন্ট রিসোর্ট (লোকেশনঃ – ম্যাপ)
  • রিভেরি হলিডে রিসোর্ট (লোকেশনঃ – ম্যাপ)

কীভাবে যাবেন ?

ঢাকা থেকে এসব রিসোর্টে যেতে সময় লাগে প্রায় ১–১.৫ ঘণ্টা (যানজটের উপর নির্ভর করে)। সরাসরি সড়কপথে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস বা পাবলিক বাসে সহজেই পৌঁছে যাবেন এই সব রিসোর্টে , তবে অনেক রিসোর্টের পিক এন্ড ড্রপ  সার্ভিস থাকায় বেশ সুবিধামত আপনার যাত্রা উপভোগ করতে পারবেন।

 

ভ্রমণ টিপস

  • রিসোর্ট বুকিং আগে থেকে কনফার্ম করে যান, বিশেষ করে উইকএন্ড বা ছুটির দিনে।
  • যদি শুধু ডে-লং প্ল্যান করেন, তবে খাবার প্যাকেজসহ বুকিং নিলে সুবিধা হবে।
  • ক্যামেরা নিতে ভুলবেন না, কারণ রিসোর্টগুলোর ভিউ আর গার্ডেন ছবি তোলার জন্য দারুণ।
  • শিশুদের নিয়ে গেলে তাদের জন্য খেলার জায়গা আছে কি না আগে দেখে নিন।

জিন্দা পার্ক

Zinda Park

ঢাকার খুব কাছেই, নারায়ণগঞ্জের দাউদপুরে প্রায় ১৫০ একর জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে জিন্দা পার্ক। চারপাশ জুড়ে সবুজে ভরা এই পার্কে রয়েছে ২৫০ প্রজাতির ১০ হাজারেরও বেশি গাছ, ৫টি বড় জলাধার আর অসংখ্য পাখি। 

পার্কের ভেতরে আছে টং ঘর, মাটির ঘর, বড় পুকুর, সাঁকো, লাইব্রেরি, মার্কেট, ক্যান্টিন ও মিনি চিড়িয়াখানা। লেকের সুসজ্জিত নৌকায় নৌবিহারের সুযোগও আছে। এখানের প্রতিটি স্থাপনায় আলাদা ধরনের স্থাপত্যশৈলী চোখে পড়বে।

১৯৮০ সালে “অগ্রপথিক পল্লী সমিতি”র ৫ হাজার সদস্য মিলে এই কাজ শুরু করে, আর দীর্ঘ ৪৫ বছরের পরিশ্রমে আজকের এই জিন্দা পার্ক। এজন্যই জিন্দা গ্রামকে বলা হয় “আদর্শ গ্রাম”।

ঢাকা থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরত্ব হওয়ায় দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যায়। নিরাপদ ও খোলামেলা পরিবেশের কারণে পিকনিক বা ডে আউটের জন্য জিন্দা পার্ক একেবারেই আদর্শ জায়গা।

কীভাবে যাবেন ?

ঢাকা থেকে জিন্দা পার্ক যাওয়ার কয়েকটি সহজ উপায় আছে:

  ১) কুড়িল ৩০০ ফিট হয়ে

    • কুড়িল থেকে লোকাল বাস বা সিএনজি করে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত যেতে পারবেন (ভাড়া জনপ্রতি ৫০–৬০ টাকা)।
    • কাঞ্চন ব্রিজের আগে বাইপাস মোড় থেকে লোকাল অটোরিকশায় জিন্দা পার্ক, ভাড়া ৩০–৪০ টাকা।
    • চাইলে রিজার্ভ সিএনজি নিয়ে সরাসরি যেতে পারবেন (ভাড়া ৫০০ – ৫৫০ টাকা)।

  ২) গুলিস্থান থেকে

      • ঢাকা থেকে কাঁচপুর ব্রিজ হয়ে ভুলতা নামতে পারেন।
      • ভুলতা থেকে মহানগর বাইপাস ধরে সিএনজি বা অটোরিকশায় জিন্দা পার্ক (দূরত্ব প্রায় ১২ কিমি)।

  ৩) নিজস্ব গাড়ি

    • আপনার প্রাইভেট কার থাকলে উপরের যেকোনো রাস্তায় সহজেই পৌঁছানো যাবে।

কেন যাবেন ও কি করবেন? 

পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিক, একদিনের ছোট্ট রিট্রিট কিংবা সহজ রিল্যাক্স করতে। হালকা হাইকিং, প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ, ফটোশুট বা লেকের ধারে বসে আরাম করা। চাইলে ছোট্ট গেইম বা আউটডোর অ্যাক্টিভিটি উপভোগ করতে পারেন।

ভ্রমণ টিপস

  • উইকএন্ডে ভিড় বেশি থাকে, তাই সকালবেলা যাওয়া ভালো।
  • শিশুদের সঙ্গে গেলে নিরাপদ জায়গায় খেলার ব্যবস্থা আছে কি না দেখে নিন।

লোকেশনঃ – ম্যাপ

বালিয়াটি জমিদার বাড়ি

Baliyati Zamindar House

মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলায় অবস্থিত বালিয়াটি জমিদার বাড়ি এক ঐতিহাসিক নিদর্শন। ঢাকার প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে এবং মানিকগঞ্জ শহর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে এই জমিদারবাড়ি ১৯ শতকের শুরুর দিকে নির্মিত হয়। প্রায় ১৬ হাজার বর্গমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই প্রাসাদটি একসময় জমিদার পরিবারের গৌরবের প্রতীক ছিল, বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে সংরক্ষিত এই প্রাসাদ ১৯ শতকের রেনেসাঁ-কলোনিয়াল স্থাপত্যের দৃষ্টান্ত।

কী দেখবেন ?

  • সাতটি প্রাসাদতুল্য ভবন, যার মধ্যে আছে পূর্ববাড়ি, পশ্চিমবাড়ি, উত্তরবাড়ি, মধ্যবাড়ি এবং গোলাবাড়ি।

  • মূল প্রবেশদ্বারে সিংহের মূর্তি ও সিংহদ্বার।

  • প্রায় ২০০ কক্ষ, প্রতিটিতেই অনন্য কারুকাজ।

  • চারপাশে বিশাল পুকুর, শানবাঁধানো ঘাট ও বাগান।

  • গ্রিক ও প্রাচ্য মিশ্রণের স্থাপত্যকলা, কোরেন্থিয়ান ধাঁচের স্তম্ভ।

  • জাদুঘরে জমিদারদের ব্যবহৃত আসবাব, ঝাড়বাতি, আয়না, সিন্দুকসহ নানা নিদর্শন।

সময়সূচি ও প্রবেশ ফি

  • গ্রীষ্মকাল (এপ্রিল–সেপ্টেম্বর): সকাল ১০টা – রাত ৬টা

  • শীতকাল (অক্টোবর–মার্চ): সকাল ৯টা – বিকেল ৫টা

  • বন্ধ: রবিবার পুরা দিন; সোমবার দুপুর পর্যন্ত; শুক্রবার নামাযের সময় (১২:৩০–১৪:৩০)

  • ফি: বাংলাদেশি নাগরিক ৩০ টাকা, বিদেশি ২০০ টাকা

কীভাবে যাবেন ?

  • ঢাকা গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে সাটুরিয়া গামী বাসে উঠুন। ভাড়া প্রায় ১০০-১২০ টাকা, সময় লাগবে প্রায় ২ ঘণ্টা (জ্যামের ওপর নির্ভর করবে)।

  • সাটুরিয়া জিরো পয়েন্টে নেমে ইজিবাইক/সিএনজি নিয়ে (ভাড়া ২০-৩০ টাকা) সহজেই পৌঁছে যাবেন বালিয়াটি জমিদার বাড়ি।

  • উত্তরা/আব্দুল্লাপুর থেকেও নবীনগর হয়ে সাটুরিয়ার বাস পাওয়া যায়।

  • চাইলে ব্যক্তিগত গাড়িতেও আরিচা রোড ধরে যেতে পারবেন।

ভ্রমণ টিপস

  • গ্রীষ্মকাল ভ্রমণের সময় (এপ্রিল–সেপ্টেম্বর): সকাল ১০টা – সন্ধ্যা ৬টা

  • শীতকাল ভ্রমণের সময় (অক্টোবর–মার্চ): সকাল ৯টা – বিকেল ৫টা

  • বন্ধ: রবিবার সারাদিন, সোমবার অর্ধদিবস, সরকারি ছুটির দিন

  • প্রবেশমূল্য দেশি দর্শনার্থীর জন্য ৩০ টাকা, সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থীর জন্য ১০০ টাকা, এবং বিদেশি নাগরিকদের জন্য ২০০ টাকা।

  • সপ্তাহের মাঝামাঝি দিন গেলে ভিড় কম এবং পরিবেশ শান্ত থাকে।

  • আরামদায়ক পোশাক ও জুতো পরুন।

  • পার্কিং সুবিধা রয়েছে, ভেতরে একটি ছোট ক্যাফে আছে।

  • সময় থাকলে কাছাকাছি ঘুরে আসতে পারেন: তোওতা রাজবাড়ি, আরিচা ঘাট, নবরত্ন মন্দির।

লোকেশনঃ – ম্যাপ

আপনার ভ্রমণ কীভাবে সহজ করে তুলবেন?

আজই আপনার ভ্রমণের পরিকল্পনা করুন Firsttrip-এর সাথে।

firsttrip.com থেকে সহজেই আপনার ফ্লাইট টিকেট বা হলিডে প্যাকেজ বুক করতে পারেন। বুকিং-এর সঙ্গে পাবেন বিশেষ অফার এবং ২৪/৭ ডেডিকেটেড কাস্টমার সাপোর্ট, যা আপনার ভ্রমণকে করে তুলবে স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং ঝামেলামুক্ত।

Checkout Our Other Blogs

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published.