বাজেটের মধ্যে ঘুরাঘুরি করার ১০টি সহজ উপায়
দেশ বিদেশে ঘুরাঘুরি করলে মন যেমন শান্ত হয় ঠিক তেমনি নতুন নতুন অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ন হয়ে উঠে আমাদের জীবন। কিন্তু ঝামেলা শুরু হয় যখন ভ্রমণের ইচ্ছে থাকে, আর আমাদের পকেট থাকে না পর্যাপ্ত পরিমান টাকা। আমরা এখনো অনেকে মনে করি ঘুরতে যাওয়া মানেই অনেক খরচের ব্যাপার। আসলে ব্যাপারটা এত কঠিন না।
স্মার্টভাবে ট্যুর পরিকল্পনা করলে আর ছোট ছোট কিছু কৌশল জানলে, দেশের ভেতরে হোক কিংবা দেশের বাইরে যেখানেই ঘুরতে যান না কেন আপনি চাইলে এই খরচ ৩০-৪০ % পর্যন্ত কমানো সম্ভব। আসুন তাহলে দেখি কীভাবে বাজেটের মধ্যেও ঘোরাঘুরিটা সহজ আর ঝামেলামুক্ত করা যায় এই ১০টি উপায়ে।
আগে থেকে পরিকল্পনা করুন
ভ্রমণের সবচেয়ে বড় ভুলগুলোর মধ্যে একটা হলো, শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া। আপনি সিদ্ধান্ত নিতে যত দেরি করবেন, ফ্লাইট, হোটেল আর ট্যুর প্যাকেজের দাম তত বেড়ে যাবে। তাই যাত্রার অন্তত এক মাস আগে থেকেই পরিকল্পনা শুরু করুন।
আগেভাগে বুকিং করলে শুধু টাকা বাঁচে না, বরং আপনি পছন্দমতো আপনার ফ্লাইট টাইম, হোটেল আর লোকেশন বেছে নিতে পারেন নিশ্চিন্তে। অনেক সময় অনলাইন ট্রাভেল সাইটগুলোতে বুকিংয়ে বিশেষ ছাড় দেয় – যেমন ‘বিভিন্ন ব্যাংক কার্ডের অফার’ বা প্রমোকোড ডিসকাউন্ট। এগুলো খুঁজে কাজে লাগান এবং ভালো পরিমান ডিস্কাউন্ট পেয়ে যান।
দেশে কিংবা বিদেশে বিমানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে একটা নিয়ম সবসময়ই সত্যি – যত আগে টিকিট বুক করবেন, দাম তত কম পড়বে। যাত্রার তারিখ এগিয়ে আসলে ফ্লাইট ভাড়া সাধারণত ৩০–৪০% পর্যন্ত বেড়ে যায়। তাই শেষ মুহূর্তের অপেক্ষা না করে অন্তত এক মাস আগে বুকিং করা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
আগেভাগে পুরো ট্রিপের বিস্তারিত প্ল্যান ঠিক করে ফেললে শুধু টাকাই বাঁচে না, অপ্রয়োজনীয় ঝামেলাও কমে। কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আগে সেই জায়গা সম্পর্কে একটু পড়াশোনা করে নিন – কোন মৌসুমে যাওয়া ভালো, কোথায় থাকা যায়, স্থানীয় যাতায়াত কেমন, আর খরচ আনুমানিক কত হতে পারে।
ভ্রমণের সময় বেছে নিন
আমাদের সবচেয়ে সাধারণ ভুলগুলোর একটা হচ্ছে – যখন সবাই ঘুরতে যায় ঠিক তখনই আমরা ঘুরতে যায়। ফলাফল হিসেবে সেই সময় টিকিটের দাম হয়ে যায় বেশি, হোটেল গুলোতে রুম ফাঁকা থাকে না, আর এতেই ট্যুরের খরচ বেড়ে হয়ে যায় দ্বিগুণ।
পিক সিজনে ভ্রমণ করলে একই জায়গা ঘোরা যায় অনেক কম খরচে। তখন হোটেলগুলো ফাঁকা থাকে, ট্যুর প্যাকেজে অফার চলে, আর ফ্লাইট ভাড়াও থাকে হাতের নাগালে।
আরও একটা ছোট টিপস হচ্ছে সপ্তাহের মাঝামাঝি, মানে মঙ্গলবার বা বুধবার ফ্লাইট ধরলে সাধারণত টিকিটের দাম কম থাকে। দেশে বা বিদেশে পিক সিজন ভ্রমণ সবসময়ই খরচ বাড়িয়ে দেয়। যেমন, কক্সবাজারের সাধারণ মানের একটি হোটেল রুম যেখানে সাধারন সময় যে টাকায় পাওয়া যায়, সেটি দীর্ঘ ছুটি, উৎসব বা নতুন বছরের সময় বেড়ে দাঁড়ায় দ্বিগুন কিংবা তিনগুন টাকায়।
এ সময় শুধু হোটেল নয়, পর্যটনকেন্দ্রেও ভিড় বেশি থাকে, টিকিট আর খাবারের দামও বাড়ে। তাই সময়টা ঠিকমতো বেছে নিতে পারলেই বাজেটের বড় একটা অংশ সেভ করা যায়।
পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করুন
ভ্রমণের বড় একটা খরচ যায় যাতায়াতে। একটু সচেতন হলেই এখানেই অনেকটা সেভ করা যায়। দামি ট্যাক্সি বা প্রাইভেট কারের বদলে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করুন – একদিকে যেমন খরচ কমবে, অন্যদিকে স্থানীয় মানুষের জীবন যাত্রার সম্পর্কে ধারণা পাবেন।
দীর্ঘ রুটে গেলে রাতের ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করুন। এতে একসাথে যাতায়াত আর থাকার খরচ দুটোই বাঁচে। সকালে গন্তব্যে পৌঁছে সরাসরি ঘুরতে বেরিয়ে পড়া যায়।
আর বিদেশে ঘোরার সময় বাজেট এয়ারলাইন গুলো দেখুন , যেমন AirAsia, Gulf air, Air arabia, Fly dubai এর মতো এয়ারলাইনগুলো নিয়মিত অফার দেয়। আগেভাগে নজর রাখলে অনেক সময় অর্ধেক দামে ফ্লাইট টিকিট পেয়ে যাবেন।
স্ট্রিট ও লোকাল খাবার
প্রতিদিন বড় বা চেইন রেস্টুরেন্টে খেলে বাজেট চোখের পলকেই শেষ হয়ে যাবে। তার বদলে স্থানীয়দের মতো খাওয়ার অভ্যাস করুন। রাস্তার পাশে ছোট দোকান, স্ট্রিট ফুড বা স্থানীয় হোটেলগুলোতে দাম অনেক কম আর স্বাদ বেশ ভালো হয়, তাই এই সব দোকান থেকে খাবার খেতে পারেন।
আরেকটা কৌশল হচ্ছে অনেক হোটেলে সকালের নাস্তা ফ্রি থাকে। সেটাকে পুরোপুরি কাজে লাগান। এতে খাবার খরচ বাঁচবে, আর স্থানীয় সংস্কৃতির স্বাদও পাবেন।
ছোট্ট এই পরিবর্তনই দীর্ঘ ট্রিপে বাজেটকে অনেকটা বাঁচিয়ে রাখে।
থাকার জায়গায় বিকল্প খুঁজে নিন
সাধারনত ট্রিপে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় হোটেলে। তাই সবসময় ফাইভ স্টার হোটেলে থাকার প্রয়োজন নেই। হোস্টেল, গেস্টহাউস, বা Airbnb-এর মতো বিকল্পে থাকলে বাজেট অনেকটাই সেভিংস হয়।
হোস্টেলে শেয়ারড বেড নিলে এক রাতের খরচ ৭০% পর্যন্ত কমে যেতে পারে। আর শহর থেকে একটু দূরে থাকলে দাম আরও কম।
বিদেশে বা এমনকি আমাদের দেশেও এখন অনেক মানুষ কমিউনিটি ট্যুরিজম সম্পর্কে জানেন। অল্প টাকায় স্থানীয় মানুষজন টুরিস্টদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন ঠিক নিজের ঘরের মতো পরিবেশে। এতে শুধু খরচ বাঁচে না, স্থানীয় সংস্কৃতি আর মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগও পাওয়া যায়।
হোটেলের তুলনায় এসব জায়গায় খরচ প্রায় অর্ধেক, অনেক সময় রান্নার সুযোগও থাকে। নিজের মতো রান্না করে খাওয়া এতে টাকাও বাঁচে, খাবারও হয় নিজের পছন্দের।
তাই থাকার খরচ বাঁচাতে এবং যাত্রা আরামদায়ক রাখতে এটাই সবচেয়ে ভালো উপায়।
গ্রুপে ভ্রমণ করুন
যেখানেই ঘুরতে যান না কেন চেষ্টা করুন বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে গ্রুপে ট্রাভেলে যেতে। এতে খরচ ভাগ হয়ে যায়, তাই বাজেটের উপর চাপ কমে। একসাথে থাকলে নিরাপত্তাও বেশি পাওয়া যায়, আর আনন্দও বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
একাই ভ্রমণ করলে সব খরচ আপনার কাঁধেই আসে। বন্ধু বা পরিবারসহ দলে ভ্রমণ করলে রুম, গাড়ি, খাবার থেকে শুরু করে সব খরচ ভাগ হয়ে যায়।
দলের সংখ্যা বড় হলে অনেক সময় ট্যুর অপারেটররা বিশেষ ডিসকাউন্ট দেয়। এমনকি চাইলে স্থানীয় গাইড, নৌকা বা চান্দের গাড়ি ভাড়া ভাগাভাগি করাও সম্ভব।
ফ্রি বা কম খরচের জায়গা ঘুরে দেখুন
প্রতিটি শহরেই কিছু আকর্ষণীয় স্থান থাকে যেখানে প্রবেশ করতে কোনো টিকিট লাগে না। যেমন পার্ক, মিউজিয়াম ডে, লোকাল মার্কেট বা সমুদ্র সৈকত। এসব জায়গায় ঘুরলে খরচ বাড়ে না, যেহেতু এইসব স্থানের প্রবেশের জন্য কোন টিকিট থাকে না তাই খরচ ও বাড়ে না। ভ্রমণের আগে এসব স্পটের তালিকা বানান।
প্রযুক্তিকে কাজে লাগান
আজকাল ভ্রমণ মানেই স্মার্ট প্ল্যানিং। আর এই প্ল্যানিংকে সহজ করে দেয় Firsttrip.com, Firsttrip ব্যবহার করে আপনি খুব সহজেই ফ্লাইট টিকিট, হোটেল বুকিং এবং ট্যুর প্যাকেজ নিতে পারবেন। এখানে সব সেরা অফার এক জায়গায় দেখতে পাবেন Firsttrip Offers-এ এবং বুকিংও হবে ঝামেলামুক্ত।
এইছাড়া ভ্রমণের সময় খাবার অর্ডার করা, যাতায়াত ঠিক করা কিংবা আশপাশের জায়গা খুঁজে পাওয়া সব কিছুই এখন অ্যাপের মাধ্যমে সম্ভব। একটু খোঁজ রাখলেই বুঝবেন, কোথায় কম খরচে ভালো অপশন আছে।
আর একটা জিনিস মাথায় রাখুন যখন ভ্রমণ করবেন সে জায়গার ম্যাপ আগেভাগে ডাউনলোড করে রাখুন। যেনো নেট না থাকলেও সহজে পথ খুঁজে পেতে কিংবা যেকোন স্থান সহজে খুজে পেতে পারেন।
এক্সপ্লোর করুন
আপনি যখন নতুন কোনো জায়গায় ঘুরতে যান, তখন হুট করে কোনো দোকানে গিয়ে কিছু কিনে ফেলবেন না। একটু সময় নিয়ে চারপাশটা ঘুরে দেখুন। দেখবেন, একই জিনিস অন্য কোন দোকানে আরও কম দামে কিংবা ভালো মানের পাওয়া যাচ্ছে।
স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলুন। উনাদের কাছ থেকেই সবচেয়ে দরকারি তথ্যগুলো পাওয়া যায় যেমন কোথায় ভালো খাবার পাওয়া যায়, কীভাবে ঘোরা যায়, কোথায় জিনিসের দাম কম ইত্যাদি।
একটা বিষয় মাথায় রাখবেন ট্যুরিস্ট স্পটের আশেপাশের দোকান বা রেস্টুরেন্টগুলোতে সাধারণত দাম একটু বেশি থাকে তাই একটু হাঁটুন, দুই-তিন মিনিট দূরে গেলেই একই জিনিস কিছুটা কম কিংবা অর্ধেক দামে পাবেন। স্থানীয় বাজারে দামাদামি করতেও দ্বিধা করবেন না।
আর যদি নিজের মতো ঘুরাঘুরি করতে পছন্দ করেন, তাহলে ট্যুর প্যাকেজ এড়িয়ে চলাই ভালো।
ব্যাকপ্যাক ট্রাভেলিং
যদি পরিবার ছাড়া একা বা বন্ধুরা মিলে কোথাও ঘুরতে যান, তাহলে ব্যাকপ্যাক ট্রাভেল করার চেষ্টা করুন। ব্যাকপ্যাক ট্রাভেল মানে হলো যতটা সম্ভব হালকা থাকা, শুধু প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে একটি ব্যাগে পুরো ট্রাভেল সেরে ফেলা।
বিদেশে ব্যাকপ্যাকারদের জন্য আলাদা হোস্টেল থাকে যেখানে থাকার খরচ নরমাল হোটেলের তুলনায় প্রায় ওয়ান থার্ড পার্সেন্ট কম। এই জায়গাগুলো শুধু কম টাকায় পাওয়া যায় এমন নয়, অন্য দেশের ট্রাভেলারদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার দারুণ সুযোগও দেয়।
মনে রাখবেন অতিরিক্ত লাগেজ মানেই বাড়তি ঝামেলা, ফ্লাইটে বাড়তি ফি, আর চলাফেরায় অস্বস্তি। তাই ট্রাভেল এর জন্য একটা ব্যাকপ্যাকই যথেষ্ট।
আপনার ভ্রমণ কীভাবে সহজ করে তুলবেন?
আজই আপনার ভ্রমণের পরিকল্পনা করুন Firsttrip-এর সাথে।
Firsttrip.com থেকে সহজেই আপনার বাজেটের মধ্যে ফ্লাইট টিকিট বা হলিডে প্যাকেজ বুক করতে পারেন। বুকিং-এর সঙ্গে পাবেন বিশেষ অফার এবং ২৪/৭ ডেডিকেটেড কাস্টমার সাপোর্ট, যা আপনার ভ্রমণকে করে তুলবে স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং ঝামেলামুক্ত।