Reset Password

Your search results
October 26, 2025

ট্রানজিট ভিসার নিয়ম না দেখে টিকিট বুকিং করলে হতে পারে বিরাট ভুল

Transit Visa

অনেকে ভাবে, ট্রানজিট মানে তো শুধু এক ফ্লাইট থেকে নেমে একটু অপেক্ষা করে আবার অন্য ফ্লাইটে ওঠা। তাহলে ট্রানজিট এর সময় ভিসার দরকার কী! কিন্তু আসল কথা হলো, ট্রানজিট মানে সবসময় শুধু ফ্লাইট বদলানো নয়। এটা আসলে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার পথে মাঝখানে একটি দেশে কিছু সময়ের জন্য যাত্রাবিরতি করা। এই সময় সাধারনত আপনি বিমানবন্দরের ভেতরেই থাকতে পারেন। তবে কিছু সময় লাগেজ নিতে বা টার্মিনাল বদলাতে ইমিগ্রেশন পার হতে হয়, ঠিক তখনই দরকার হয় ট্রানজিট ভিসা।

সাধারণত ট্রানজিট মানে কানেক্টিং ফ্লাইট নেওয়া। একটা ফ্লাইট থেকে নেমে অন্য ফ্লাইটে ওঠার মাঝে যে অপেক্ষার সময়টা থাকে, সেটাই ট্রানজিট। কিন্তু সেই অপেক্ষা কতটা ঝামেলাহীন হবে, সেটা নির্ভর করে আপনি নিয়ম জানেন কি না তার ওপর। আসুন আজকে জেনে নিবো ট্রানজিট ভিসার নিয়ম না দেখে টিকিট বুকিং করলে আমাদের কী কী ভুল হতে পারে। 

 

কেন এমন হয় ? 

ট্রানজিট মানে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাওয়ার পথে মাঝের কোনো দেশে সাময়িক বিরতি নেওয়া। এখন প্রশ্ন হলো এই “মাঝের দেশ” অবস্থান করার সময় কী আপনি শুধুমাত্র বিমানবন্দরের ট্রানজিট জোনে অবস্থান করবেন ? 

নাকি লাগেজ সংগ্রহ করতে ট্রানজিট জোনের বাইরে যেতে হবে? 

অথবা এয়ারলাইন বা টার্মিনাল বদলাতে হবে?

যদি লাগেজ তুলতে হয় বা অন্য এয়ারলাইনে উঠতে হয়, তাহলে আপনার ট্রানজিট ভিসা লাগবে। কারণ লাগেজ নেওয়া বা নতুন ফ্লাইটে উঠতে হলে ইমিগ্রেশন পার হতে হয়। আর ইমিগ্রেশন মানে সেই দেশে প্রবেশ, তাই তখন ভিসা ছাড়া উপায় থাকে না।

তাই এই বিষয়গুলোই নির্ধারণ করে আপনার ট্রানজিট ভিসা লাগবে কি না।

এই বিষয়টা এখন কেবল সতর্কবার্তা নয়, বাস্তব অভিজ্ঞতা মুখোমুখি হয়েছেন অনেক যাত্রী। প্রতিদিনই কেউ না কেউ ট্রানজিট ভিসার নিয়ম না জানার কারণে বিমানবন্দর থেকে ফিরে যাচ্ছেন বাসায়। এতে করে যাত্রী হারাচ্ছেন টিকিটের টাকা, সময়, আর মানসিক শান্তি।

সাধারণত সবচেয়ে বেশি ভুল হয় অনলাইন বুকিং-এর সময়। অনেকে ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর বা অন্য কোনো দেশে ট্রানজিট হয়ে ইউরোপ বা আমেরিকা যেতে টিকিট কাটেন। নিয়ম জানা বা যাচাই করার সুযোগ থাকলেও, বেশিরভাগ সময় মানুষ সেটি খেয়াল করেন না। ফলে আপনি পড়বেন বিশাল ঝামেলায়।  

 

ট্রানজিট ভিসা কীভাবে কাজ করে ?

Indirect Flight

ট্রানজিট ভিসা মূলত একটি শর্টটার্ম অনুমতি। যা আপনাকে অন্য দেশে যাওয়ার পথে মাঝে কোনো দেশের বিমানবন্দরে কিছু সময় অবস্থান করার সুযোগ দেয়। সহজভাবে বললে, আপনি এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাচ্ছেন, কিন্তু মাঝপথে কোনো দেশে ফ্লাইট বদলাতে বা অপেক্ষা করতে হচ্ছে এই সময়টায় সেই দেশের যে অনুমতি লাগে, সেটাই ট্রানজিট ভিসা।

সাধারণত এই ভিসা কার্যকর থাকে কয়েক ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ৯৬ ঘণ্টা পর্যন্ত। এটা আপনাকে বিমানবন্দরের নির্দিষ্ট ইন্টারন্যাশনাল জোনের ভেতরে সীমাবদ্ধ রাখে (যেটাকে বলা হয় এয়ারসাইড)। তবে  অনেক দেশে আপনার ট্রানজিট ভিসা থাকলে আপনি ঘুরে দেখতে পারবেন শহরটাও।

সব দেশে ট্রানজিট ভিসা লাগে না। তবে কিছু দেশ যেমন যুক্তরাজ্য, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, তুরর্স্ক, সেনজেন দেশগুলো ট্রানজিট যাত্রীদের জন্য বিশেষ নিয়ম মেনে চলে।
অর্থাৎ, আপনার ফ্লাইটের সময়, গন্তব্য, এমনকি পাসপোর্ট কোন দেশের সেটার ওপর নির্ভর করে আপনার ট্রানজিট ভিসা লাগবে কি না।

এছাড়া ট্রানজিট ভিসা পেতে সাধারণত আপনাকে পরবর্তী ফ্লাইটের টিকিট দেখাতে হয়। এতে বোঝা যায়, আপনি কেবল যাত্রাবিরতি করছেন এবং ওই দেশে থাকতে যাচ্ছেন না।

 

বিমানবন্দর

দেশ

ভিসা লাগবে ?

ভিসা ছাড়া সর্বোচ্চ সময়

দোহা 

কাতার

সাধারণত ভিসা লাগে না

২৪ ঘণ্টা

দুবাই 

ইউএই

লন্ডন  / ম্যানচেস্টার

যুক্তরাজ্য (UK)

ভিসা লাগে

২৪ ঘণ্টা

ইস্তানবুল 

তুরস্ক

ভিসা লাগে

২৪ ঘণ্টা

সাংহাই / গুয়াংজু 

চীন

নির্দিষ্ট গন্তব্যে ২৪–১৪৪ ঘণ্টা

পর্যন্ত ভিসা লাগে না 

সর্বোচ্চ ১৪৪ ঘণ্টা

ফ্রাঙ্কফুর্ট / মিউনিখ 

জার্মানি

ভিসা বাধ্যতামূলক

২৪ ঘণ্টা

নিউইয়র্ক / আটলান্টা

যুক্তরাষ্ট্র (USA)

ভিসা লাগে

ভিসা বা ESTA প্রয়োজন

কখন ট্রানজিট ভিসা লাগে ?

সবসময় ট্রানজিটে ভিসা দরকার হয় না, তবে কিছু নির্দিষ্ট সময় বা পরিস্থিতিতে এটি বাধ্যতামূলক। যেমন: 

  • আপনি যদি দুইটি আলাদা টিকিটে ভ্রমণ করেন
  • যদি ট্রানজিট দেশে আপনার লাগেজ সংগ্রহ করতে হয় বা নতুন করে চেক-ইন করতে হয়
  • অনেকক্ষেত্রে ফ্লাইটের লে-ওভার সময় ৮ থেকে ৯ ঘণ্টার বেশি হলে
  • একই এয়ারলাইন বা পার্টনার ফ্লাইট যদি না হয়
  • আপনার হাতে যদি পরবর্তী এয়ারলাইন্সের বোর্ডিং পাস না থাকলে 
  • অথবা আপনার পাসপোর্ট ট্রানজিট দেশের এয়ারসাইডে (বিমানবন্দরের ইন্টারন্যাশনাল অংশে) আপনাকে থাকার অনুমতি যদি না দেয়। 

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, যদি ফ্লাইট বদলানোর সময় আপনাকে বিমানবন্দরের বাইরে যেতে হয়, তাহলে ট্রানজিট ভিসা ছাড়া যাত্রা সম্ভব নয়।

 

ট্রানজিট ভিসা নিয়ে সাধারণ ভুল এবং কীভাবে এড়িয়ে চলবেন ? 

  • ভিসা নিয়ম না জেনে টিকিট বুকিং করা
    অনেক সময় যাত্রীরা শুধু সস্তা টিকিট দেখেই বুকিং করেন, ভিসার নিয়ম না দেখে। কিন্তু কিছু দেশে ট্রানজিটের জন্যও ভিসা বাধ্যতামূলক। তাই আগে ট্রানজিট দেশের নিয়ম দেখে নিন, যাতে বিমানবন্দরে গিয়ে বোর্ডিং বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝামেলা এড়ানো যায়।
  • পাসপোর্ট মেয়াদ ৬ মাসের কম থাকা
    অনেক দেশে ট্রানজিট করতে গেলে পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে। যদি মেয়াদ কম হয়, যাত্রা শুরু হওয়ার আগেই সমস্যা হতে পারে। তাই যাত্রার আগে পাসপোর্ট মেয়াদ যাচাই করুন।
  • Split ticket বা আলাদা টিকিটে ভ্রমণ
    একাধিক এয়ারলাইনে আলাদা টিকিটে ভ্রমণ করলে লাগেজ সরাসরি ট্রান্সফার হয় না এবং আপনাকে নতুন করে চেক-ইন করতে হতে পারে। এতে ইমিগ্রেশন পার হতে হবে, আর তখনই ট্রানজিট ভিসা লাগতে পারে। তাই সম্ভব হলে একই এয়ারলাইন বা পার্টনার এয়ারলাইনে পুরো যাত্রার টিকিট নিন।
  • ভুল ভিসা টাইপ নেওয়া
    কিছু ভিসা সব ধরনের ট্রানজিটের জন্য চলে না। যেমন, US ESTA সব ফ্লাইটে কাজ করে না। তাই যাত্রার আগে নিশ্চিত করে নিন, আপনার ভিসা সেই দেশে এবং ট্রানজিটের জন্য সঠিক কি না।
  • রাতের লে-ওভার
    যদি লে-ওভার রাতে হয় এবং হোটেলে থাকতে চান, অনেক ক্ষেত্রে ট্রানজিট ভিসা বাধ্যতামূলক। আগে পরিকল্পনা করুন, যাতে হঠাৎ করে জায়গা খালি না থাকে বা ফ্লাইট মিস না হয়।
  • লে-ওভার সময় বেশি
    লে-ওভার যদি ৬ ঘণ্টার বেশি হয়, তাহলে দেশের নিয়ম অনুযায়ী আপনাকে ইমিগ্রেশন এ চেক-ইন করতে হতে পারে। এমন ক্ষেত্রে ট্রানজিট ভিসা লাগতে পারে। তাই আগে সময় দেখে নিন এবং বিমানবন্দর বা এয়ারলাইনের নিয়ম যাচাই করুন।
  • ভিসা-ফ্রি ট্রানজিট এয়ারলাইন্স ব্যবহার করা
    কিছু এয়ারলাইন্স যেমন কাতার, তুর্কিশ, এমিরেটস নির্দিষ্ট দেশে ট্রানজিট যাত্রীদের জন্য ভিসা-ফ্রি স্টপওভার সুবিধা দেয়। এসব এয়ারলাইন্স ব্যবহার করলে ভিসার ঝামেলা কমে যায় এবং যাত্রা আরও স্বস্তিকর হয়।

ট্রানজিট দেশের নিয়ম জেনে ভ্রমণ করুন সহজে

layover flight

ট্রানজিট ভিসার নিয়ম না জেনে টিকিট বুকিং করা মানে শুধু আপনার বোর্ডিং মিস হওয়া নয় এতে করে আপনার পুরো ট্রিপটাই বাতিল হয়ে যেতে পারে। তাই সস্তা টিকিট দেখে তাড়াহুড়ো করে টিকিট বুক করবেন না। বুকিং-এর আগে কিছু সময় নিন, ট্রানজিট দেশের নিয়ম যাচাই করুন। ভ্রমনের আগে ছোট একটা চেকলিস্ট করে তৈরী করে দেখে নিন আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস আছে নাকি। যেমন: 

  • গন্তব্য দেশের ভিসা আছে নাকি?  
  • ট্রানজিট দেশের নিয়ম জানা আছে নাকি? 
  • টিকিট এক এয়ারলাইনের কী না ? 
  • বোর্ডিং পাস আগেই ইস্যু হবে কী না ?

এইসব চেক করে আপনার যাত্রা শুরু করুন নিশ্চিন্তে।

 

আপনার ভ্রমণ কীভাবে সহজ করবেন ?

আজই আপনার ভ্রমণের পরিকল্পনা করুন Firsttrip-এর সঙ্গে। Firsttrip.com থেকে সহজেই আপনার বাজেটের মধ্যে ফ্লাইট টিকিট বা হলিডে প্যাকেজ বুক করতে পারেন। বুকিং-এর সঙ্গে পাবেন বিশেষ অফার এবং ২৪/৭ ডেডিকেটেড কাস্টমার সাপোর্ট, যা আপনার যাত্রাকে করে তুলবে স্বাচ্ছন্দ্যময় ও ঝামেলামুক্ত।

 

Checkout Our Other Blogs

Category: Travel Smarter
Share

Leave a Reply

Your email address will not be published.