Reset Password

Your search results
October 15, 2025

কক্সবাজারের যে ১০টি পর্যটন স্থানে যাওয়া উচিত

cox's bazar

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের নাম শুনলেই প্রথমেই মনে আসে, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত এবং একইসাথে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থান। 

পুরো ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সৈকত প্রতি বছর লাখো দেশি-বিদেশি পর্যটককে মুগ্ধ করে রাখে তার উত্তাল ঢেউ, নীল জলরাশি আর মনোমুগ্ধকর সূর্যাস্তের সৌন্দর্যের মাধ্যমে। 

নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের জন্যে বিখ্যাত এই জেলার চট্রগ্রাম থেকে দূরত্ব ১৫২ কিলোমিটার ও ঢাকা থেকে ৪১৪ কিলোমিটার। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ছাড়াও এইখানে আছে আরও অনেক দর্শণীয় স্থান ও স্থাপনা। 

চলুন, জেনে নিই কক্সবাজারের আশেপাশের কিছু চমৎকার সৈকত ও দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে, যা আপনার  কক্সবাজার ভ্রমণকে করে তুলবে আরো আকর্ষণীয়। আজকে আমরা দেখে নিবো কক্সবাজারের যে ১০টি পর্যটন স্থানে আপনার যাওয়া উচিত। 

 

রামু বৌদ্ধ বিহার

Ramu Maitree Bihar

রামু হলো কক্সবাজার জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা, যা বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও প্রাচীন নিদর্শনে ভরপুর। এখানে রয়েছে প্রায় ৩৫টি বৌদ্ধ মন্দির ও জাদি, প্রতিটিই তার নিজস্ব স্থাপত্য ডিজাইনে পর্যটকদের নজর কাড়ে।

রামু ঘুরে দেখার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো উত্তর মিঠাছড়ির পাহাড়চূড়ায় গৌতম বুদ্ধের ১০০ ফুট লম্বা সিংহশয্যা মূর্তি। কথিত আছে এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ বুদ্ধমূর্তি। কাছেই রয়েছে নবনির্মিত কেন্দ্রীয় সীমাবিহার, যেখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা নিয়মিত ধর্মীয় অনুশীলন করেন।

কিছুটা দক্ষিণে গেলে চোখে পড়বে লালচিং ও সাদাচিং বৌদ্ধ বিহার। কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরের এই উপজেলা একসময় ছিল আরাকান বৌদ্ধ সংস্কৃতির প্রাণভূমি। শীতকাল (নভেম্বর–ফেব্রুয়ারি) রামু ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।

কীভাবে যাবেন ?

  • স্থানীয় সিএনজি, ট্যাক্সি বা অটোরিকশায় করে সহজেই যাওয়া যায়।
  • জনপ্রতি ভাড়া পড়বে প্রায় ৪০ টাকা।
  • যদি পুরো অটোরিকশা রিজার্ভ নেন, যাওয়া–আসা ও ঘোরাঘুরিসহ ৪০০–৫০০ টাকায় হয়ে যাবে।
  • একটি অটোরিকশায় ৫–৬ জন আরামেই যেতে পারেন।

টিপস 

  • সকালবেলা গেলে মন্দিরগুলো ঘুরে দেখা যায়।
  • প্রতিটি বিহারে প্রবেশের আগে জুতা খুলে ফেলতে হয়, তাই স্লিপার পড়ে যাওয়া ভালো।
  • কিছু স্থানের ছবি তোলার অনুমতি থাকে না  তাই আগেই জেনে নিন অথনবা পারমিশন নিন।
  • স্থানীয় দোকান থেকে ছোটখাটো বৌদ্ধ স্মারক বা স্থানীয়শিল্পের আর্টওয়ার্ক সংগ্রহ করতে পারেন।

লোকেশন: ম্যাপ 

 

কুতুবদিয়া বাতিঘর

Kutubdia Lighthouse

চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাস অনেক পুরোনো। খ্রিষ্টীয় নবম শতক থেকেই আরব বণিকেরা এখানে আসতেন বাণিজ্যের জন্য। কিন্তু তখন সমুদ্রে দিকনির্দেশনার কোনো উন্নত যন্ত্র ছিল না, তাই নাবিকরা আকাশের তারা আর বাতাসের দিক দেখে পথ চিনতেন।

জাহাজ চলাচলের সুবিধার্থে ব্রিটিশ সরকার সমুদ্র উপকূলে বাতিঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই থেকেই জন্ম কুতুবদিয়া বাতিঘরের।

বর্তমানে বাতিঘরের নতুন কাঠামো তৈরি হয়েছে বড়ঘোপ বাজারের উত্তরে অবস্থিত এই বাতিঘর, যা এখনো সমুদ্রগামী জাহাজকে দিকনির্দেশনা দেয়।

কীভাবে যাবেন?

কক্সবাজার শহর থেকে সিএনজি বা বেবিট্যাক্সি ধরে মাগনামা ঘাটে যেতে হবে।
তারপর কুতুবদিয়া চ্যানেল পার হতে হবে নৌকা বা স্পিডবোটে করে।

  • ইঞ্জিনচালিত নৌকা: সময় লাগবে প্রায় ২০–২৫ মিনিট
  •  স্পিডবোট: সময় লাগবে মাত্র ১০ মিনিট 

কুতুবদিয়া ঘাট থেকে স্থানীয় পরিবহনে সহজেই পৌঁছে যাবেন বাতিঘর এলাকায়। 

টিপস

  • সকালে যাত্রা শুরু করুন, তাহলে ফেরার সময় সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারবেন।
  • নৌকায় উঠলে লাইফজ্যাকেট ব্যবহার করুন।
  • বাতিঘরের আশপাশের জায়গাগুলো এখনো তুলনামূলক নির্জন, তাই গ্রুপে ভ্রমণ করাই ভালো।

লোকেশন: ম্যাপ 

 

রেজু খাল কায়াকিং ও সালসা সৈকত

Cox Kayaking

ইনানি যাওয়ার ঠিক আগে পড়বে রেজু খাল, মিয়ানমার থেকে উৎপত্তি হয়ে এই খাল বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। আপনি চাইলে এখানে উপভোগ করতে পারেন কায়াকিং।
দুজনের আধা ঘণ্টার রাইডের ভাড়া মাত্র ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা।  

রেজু খাল পেরোলেই সামনে সালসা সৈকত, যাকে স্থানীয়রা বলে “কাঁকড়া বিচ”। এখানে কাঠের সেতু পার হয়ে যেতে হয় প্যারাসেইলিং পয়েন্টে।

কীভাবে যাবেন ?

কক্সবাজার শহর থেকে ইনানি যাওয়ার পথে মেরিন ড্রাইভ ধরে রওনা দিন। ইনানির প্রায় ৭–৮ কিলোমিটার আগেই রেজু খাল পয়েন্ট পড়বে।
শহর থেকে স্থানীয় সিএনজি বা মাইক্রোবাসে করে যেতে পারেন।

  • সিএনজি ভাড়া: জনপ্রতি ১০০–১৫০ টাকা (ওয়ান ওয়ে)।
  • রিজার্ভ নিলে: যাওয়া–আসা ও ঘোরাঘুরি মিলিয়ে ৮০০–১২০০ টাকায় হয়ে যায়।
  • সময় লাগবে প্রায় ১ ঘণ্টা।

টিপস

  • সকাল বা বিকেলের দিকে গেলে আলো ও আবহাওয়া দুটোই মনোরম থাকে।
  • কায়াকিংয়ের সময় অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট পরুন।
  • মোবাইল বা ক্যামেরা নেওয়ার আগে জলরোধী ব্যাগ রাখুন।
  • সৈকতের প্যারাসেইলিং উপভোগ করতে চাইলে আগে থেকেই রাইড বুক করে নিন।

লোকেশন: ম্যাপ 

 

পাটুয়ারটেক - শ্যামলাপুর সৈকত

Himchari National Park

কক্সবাজার থেকে একটু দক্ষিণে গেলে পাবেন পাটুয়ারটেক সৈকতে। ইনানী থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরের এই সৈকত যেন সেন্ট মার্টিনের ছোট ভার্সন। সৈকতজুড়ে ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন আকারের নুড়ি-পাথর, কিছু জায়গায় দেখা মেলে লাল কাঁকড়ার দল। পাটুয়ারটেকের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য হলো, এখানে বসেই আপনি একইসঙ্গে সমুদ্র, পাহাড় আর পাথরের দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।  পাটুয়ারটেক থেকে আরও ১৭ কিলোমিটার এগিয়ে গেলে পাওয়া যাবে শ্যামলাপুর সৈকত। 

কীভাবে যাবেন ?

কক্সবাজার শহর থেকে ডলফিন মোড় হয়ে মেরিন ড্রাইভ রোডে উঠুন। পথে পড়বে হিমছড়ি, লাল কাঁকড়ার সৈকত, রেজু খাল, ইনানী—আর একটু এগোলেই পাটুয়ারটেক সৈকত।

  • সিএনজি ভাড়া: ১০০০–১৫০০ টাকা (ওয়ান ওয়ে)
  • অটো ভাড়া: ১০০০–১২০০ টাকা
  • চান্দের গাড়ি: ৪০০০–৪৫০০ টাকায় সারাদিন ঘোরা যায়

সময় লাগবে আনুমানিক ১ থেকে দেড় ঘণ্টা। 

টিপস 

  • পাথরের কিছু জায়গা পিচ্ছিল তাই সাবধানে হাঁটবেন।
  • নির্জন সৈকত হওয়ায় সন্ধ্যার পর ঘোরাঘুরি না করাই ভালো।
  • সৈকতের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন।
  • এখানে ঘোড়ায় চড়া কিংবা কোয়াড বাইক ভাড়া করে ঘুরে দেখার সুযোগও আছে।

লোকেশন: ম্যাপ

 

হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান

Himchari National Park

কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ ধরে টেকনাফের দিকে ১২ কিলোমিটার এগোলে দেখা মেলে হিমছড়ি। এই পাহাড়কে আগে বলা হতো ‘হিমপরির পাহাড়’, স্থানীয় কল্পকাহিনী অনুযায়ী একসময় পাহাড়ের চূড়ায় আসতেন সাগরের পরীরা। আজ এই পাহাড় আর ঝরনার নামই হিমছড়ি, আর পাশেই আছে পরিচিত হিমছড়ি সৈকত।

প্রায় ২৮০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে দেখা যায় চারপাশের নয়নাভিরাম দৃশ্য। পাহাড়ের উপর থেকে নিচে সমুদ্রের গর্জন শুনতে শুনতে মনে হবে সমুদ্রের উপর বসে আছেন। এখানে আসলে স্বাভাবিকভাবেই মন ভরে যায় প্রকৃতির সৌন্দর্যে। 

হিমছড়ি ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র পরিচালনা করছে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ। এখানে টিকিট মূল্যে মাত্র ৩৫ টাকা।

কীভাবে যাবেন?

কক্সবাজার শহর থেকে হিমছড়ি পৌঁছাতে ডলফিন মোড় থেকে মেরিন ড্রাইভ রোড ধরে ১২ কিলোমিটার যেতে হবে। স্থানীয় সিএনজি, অটো বা জিপ-মাইক্রোবাস ও চান্দের গাড়ি সহজে পাওয়া যায়।
সিএনজি ভাড়া: ১০০০–১৫০০ টাকা, অটো ভাড়া ১০০০–১২০০ টাকা। চান্দের গাড়ি ৪৫০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকায় পাওয়া যায়। 

টিপস

  • সাবধানে পাহাড়ে উঠুন।
  • পরিবেশ সংরক্ষণ করুন যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলবেন না।

লোকেশন: ম্যাপ 

 

সেন্টমার্টিন দ্বীপ

Saint Martin's Island

সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এই দ্বীপকে স্থানীয়রা ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ নামেও ডাকে। সেন্টমার্টিন মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণে, কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। প্রচলিত আছে অনেক অনেক বছর আগে প্রতিকুল আবহাওয়ার মধ্যে এখানে দারুচিনি বোঝাই আরবের একটি বাণিজ্যিক জাহাজ পানির নীচে থাকা একটি বিশাল পাথরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ভেঙ্গে পড়ে, যার ফলে জাহাজে থাকা দারুচিনি এই দ্বীপের সবখানে ছড়িয়ে যায় এবং পরবর্তীতে সেন্ট মার্টিন’স দ্বীপের নাম হয়ে যায় ‘দারুচিনির দ্বীপ’।

এই বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য সেন্টমার্টিন খোলা থাকবে। তবে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে শুধু দিনের বেলা সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করা যাবে অর্থাৎ রাতে থাকা যাবেনা সেন্টমার্টিনে। আর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে রাতে থাকতে পারবেন পর্যটকরা।

কীভাবে যাবেন ?

প্রথমে কক্সবাজার শহর থেকে নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটি ঘাটে যেতে হবে। অটো রিক্সা নিয়ে সময় লাগে প্রায় ২০-২৫ মিনিট, ভাড়া ১০০-১৫০ টাকা। এখান থেকেই সেন্টমার্টিনের জাহাজ ছেড়ে যায়। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে প্রতিদিন কয়েকটি জাহাজ/শীপ চলে এই রুটে। সেন্টমার্টিন রুটে চলাচলকারী প্রধান শীপগুলো হলো: কর্ণফুলী, বারো আউলিয়া, কেয়ারী সিন্দাবাদ, কেয়ারি ক্রুজ এন্ড ডাইন, এম ভি ফারহান, আটলান্টিক। 

 টিপস

  • কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত জাহাজে সময় লাগে প্রায় ৫-৬ ঘন্টা। 
  • জাহাজের ক্লাস ও মান অনুযায়ী রাউন্ড টিকেটের ভাড়া ২,২০০ থেকে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত।
  • জেটি ঘাট থেকে প্রতিদিন জাহাজগুলো সকাল ৭টা থেকে ১০টার মধ্যে ছেড়ে যায়।
  • সেন্টমার্টিন থেকে ফেরত আসে বিকেল ৩টা থেকে ৬টার মধ্যে।
  • দ্বীপের পরিবেশ বজায় রাখুন।

লোকেশন: ম্যাপ 

 

মেরিন ড্রাইভ রোড ও  ইনানী

Marine Drive

ডলফিন মোড় থেকে মেরিন ড্রাইভ ধরে একটু এগোলেই একপাশে পাহাড়, আরেকপাশে বিশাল সমুদ্র। মাঝে মাঝেই ঝাউবনের ফাঁক দিয়ে উঁকি দেয় নীল জল। এই পথটা নিজেই যেন একটা অভিজ্ঞতা। প্রায় ৮০ কিলোমিটার লম্বা এই পথে যেতে সময় লাগে এক দুই থেকে তিন ঘণ্টা।কক্সবাজারের থেকে খোলা জিপ, মাইক্রোবাস, সিএনজি কিংবা অটোরিকশায় মেরিন ড্রাইভ রোড দিয়ে হিমছড়ি ও ইনানী সমুদ্র সৈকত যাওয়া যায়। 

কীভাবে যাবেন ?

কক্সবাজারের যেকোনো জায়গা থেকে মেরিন ড্রাইভ রোডে যাওয়ার জন্য খোলা জীপ, মাইক্রোবাস, সিএনজি বা অটো পাওয়া যায়। পুরো মেরিন ড্রাইভ এবং আশেপাশের স্থান ঘুরে দেখার জন্য চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় ধরে রাখাই ভালো। ভাড়া সাধারণত ইজিবাইক বা সিএনজির জন্য সারাদিন ১৫০০–২৫০০ টাকা এবং জীপ বা চান্দের গাড়ির জন্য ৪০০০–৫০০০ টাকা হয়; পিক সিজনে খরচ একটু বেশি হতে পারে। 

টিপস:

  • চেকপোস্টে তথ্য দিয়ে সাহায্য করুন।
  • রোদ থেকে বাঁচতে সানস্ক্রিন, টুপি ও চশমা ব্যবহার করুন।
  • পর্যাপ্ত পানি সঙ্গে রাখুন।

লোকেশন: ম্যাপ 

 

সোনাদিয়া দ্বীপ

Sonadia Island

সোনাদিয়া দ্বীপ কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার এক ছোট্ট দ্বীপ। প্রায় ৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা খাল, ম্যানগ্রোভ বন, বালিয়াড়ি এবং সমুদ্র সৈকত এক সঙ্গে তৈরি করেছে প্রকৃতির এক অপূর্ব দৃশ্য। তাছাড়া শীতকালে বিপন্ন সামুদ্রিক কাছিমের বিচরণ এবং দেশি-বিদেশি জলচর পাখির আসা-যাওয়া এই দ্বীপকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। 

দ্বীপের নামকরণেও রয়েছে রোমাঞ্চকর গল্প। স্থানীয়দের কথায়, এক সময়ে মহেশখালীর উপকূলে সোনা ভর্তি একটি জাহাজডুবি ঘটেছিল, যার সূত্রে দ্বীপটির নাম ‘সোনাদিয়া’ পড়েছে। কেউ আবার মনে করেন, এখানে মুক্তার চাষ হতো। মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির এই সম্পর্ক, এবং ছোট ছোট লোককথার গল্প দ্বীপকে আরও রহস্যময় করে তুলেছে। ভ্রমণের সেরা সময় হলো নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি।

কীভাবে যাবেন ?

কক্সবাজার থেকে নাজিরার টেক বা ৬ নাম্বার ঘাটে গিয়ে স্পিডবোট বা লাইফবোটে সোনাদিয়া পৌঁছানো যায়। স্পিডবোটে ২০–৩০ মিনিট, লাইফবোটে প্রায় ১ ঘণ্টা লাগে। কম খরচে মহেশখালী ও ঘটিভাঙ্গা হয়ে যাত্রা করা সম্ভব। স্থানীয় নৌকা ভাড়া সাধারণত ৫০–১০০ টাকা।

টিপস 

  • ক্যাম্পিং করতে হলে স্থানীয়দের পরামর্শ নিন
  • বিদ্যুত নেই তাই সোলার বা পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখুন
  • সাগরে সাঁতার কাটার সময় সতর্ক থাকুন
  • দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করুন

লোকেশন: ম্যাপ 

 

ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক

Dulhazra Safari Park

ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, যা কক্সবাজার শহর থেকে ৪০–৪৭ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় হরিণ প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে পার্কটি গড়ে তুললেন।এখানে আছে হরিণ, সিংহ, বাঘ, ভালুক, হাতি, গয়াল, জলহস্তী, কুমির ও আরও নানা দেশি-বিদেশি প্রাণী। পার্কটি ছয়টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, বিশ্রামাগার ও ডরমেটরীর নিয়ে সাজানো। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা, ৫ বছরের বড় শিশু-কিশোরদের জন্য ৩০ টাকা। 

পার্কে নিরাপত্তার জন্য প্রত্যেক বেষ্টনীতে পশু-পাখিদের আলাদা এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাঘ ও সিংহের জন্য আলাদা সাফারি, আর জেব্রা, গয়াল, হরিণসহ অন্যান্য প্রাণীর জন্য কয়েকশ’ একর বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বেষ্টনীতে দর্শকরা নিরাপদ দূর থেকে প্রাণীর খেলাধুলা, দৌড়ঝাঁপ এবং প্রাকৃতিক আচরণ দেখতে পারেন। 

কীভাবে যাবেন ?

ঢাকা থেকে বাসে কক্সবাজারে এসে ডুলাহাজারা নামক স্থানে নেমে পার্কে পৌঁছানো যায়। কক্সবাজার শহর থেকে গাড়িতে প্রায় ৩০–৪০ মিনিটে পার্কে পৌঁছানো সম্ভব। 

টিপস 

  • আরামদায়ক পোশাক ও জুতা পরুন, এতে হেঁটে ঘোরার সময় সুবিধা হবে।
  • পর্যাপ্ত পানি এবং হালকা খাবার সঙ্গে রাখুন।

লোকেশন: ম্যাপ 

 

মহেশখালী দ্বীপ

Maheshkhali Island

কক্সবাজার ভ্রমণ করলে সাগরের ঢেউ আর সৈকতের মায়া সবাইকে আকর্ষণ করে। একটু ভিন্ন অভিজ্ঞতা চাইলে ঘুরে আসতে পারেন মহেশখালী দ্বীপ। কক্সবাজার শহর থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে সাগরের মাঝেই এই পাহাড়ি দ্বীপটি অবস্থিত।

মহেশখালী উপজেলা প্রায় ৩৬২ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত, যার মধ্যে আছে সোনাদিয়া, মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা। এখানে শুধু সাগর আর পাহাড় নয়, আছে দেশের বিখ্যাত মিষ্টি পান, মাছ, চিংড়ি, লবণ ও মুক্তার চাষ। ইতিহাস বলছে, প্রায় ২০০ বছর আগে বৌদ্ধ সেন মহেশ্বর বা শিবের নাম অনুসারে দ্বীপটির নামকরণ করা হয়। এখানে প্রতিবছর ফাল্গুন মাসে আদিনাথ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দ্বীপের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আছে: সোনাদিয়া দ্বীপ, আদিনাথ মন্দির ও আদিনাথ মেলা, বৌদ্ধ কেয়াং বা মন্দির, রাখাইন পাড়া, স্বর্ণ মন্দির, মৈনাক পাহাড়।

কীভাবে যাবেন ?

কক্সবাজার থেকে মহেশখালী যাওয়ার জন্য ৬ নং জেটি ঘাট ব্যবহার করা হয়। সেখান থেকে স্পিডবোটে ভাড়া ৭৫ টাকা, সময় লাগে ২০–৩০ মিনিট। ট্রলারে জনপ্রতি ৩০ টাকায় এক ঘণ্টায় পৌঁছানো যায়। ঘাটে নেমে অটোরিকশা বা সিএনজি ভাড়া করে সোনাদিয়া বা অন্যান্য দর্শনীয় জায়গায় যাওয়া সম্ভব।

টিপস

  • পাহাড়ি পথ বেয়ে গেলে আরামদায়ক জুতা পরুন।
  • মিষ্টি পান অবশ্যই খেতে ভুলবেন না।
  • যদি সময় থাকে, সোনাদিয়া দ্বীপেও চলে যেতে পারেন। 

লোকেশন: ম্যাপ

 

আপনার ভ্রমণ কীভাবে সহজ করে তুলবেন?

আজই আপনার ভ্রমণের পরিকল্পনা করুন Firsttrip-এর সাথে।

firsttrip.com থেকে সহজেই আপনার কক্সবাজারের ফ্লাইট টিকেট বা হলিডে প্যাকেজ বুক করতে পারেন। বুকিং-এর সঙ্গে পাবেন বিশেষ অফার এবং ২৪/৭ ডেডিকেটেড কাস্টমার সাপোর্ট, যা আপনার ভ্রমণকে করে তুলবে স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং ঝামেলামুক্ত।

 

Checkout Our Other Blogs

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published.